মঙ্গলবার , ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , রাত ০২:২০


বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ইসলামি উগ্রবাদের উত্থান: জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উদ্বেগ

রিপোর্টার : নিজস্ব প্রতিবেদক,
প্রকাশ : রবিবার , ৩০ মার্চ ২০২৫ , রাত ০৮:৪৫

ইউরোপ প্রতিনিধি

জেনেভা, ২৭ মার্চ ২০২৫: বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভাঙন, অরাজকতার প্রশ্রয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি এবং ইসলামি চরমপন্থীদের উত্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সাত মাসের শাসনকালে এই পরিস্থিতি সংখ্যালঘুসহ লাখো মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৮তম অধিবেশনের পার্শ্ব ইভেন্টে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে ইরান, ইরাক ও আফগানিস্তানের শাসন পরিবর্তনের পরের ভয়াবহ পরিস্থিতির সাদৃশ্য তুলে ধরেন।

তুমুকু ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল ইউনিয়ন (টিএসিইউডিইউ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেকুলার বাংলাদেশ (সুইজারল্যান্ড চ্যাপ্টার) আয়োজিত এই ইভেন্টটি জেনেভার পালে দ্য নেশনস-এর রুম XXV-এ অনুষ্ঠিত হয়। “বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ইসলামি চরমপন্থার উত্থান” শীর্ষক এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী ফজল-উর রহমান আফ্রিদি এবং সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক কেভিন লরেন্স। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এমপি পল ব্রিস্টো, তদন্তকারী সাংবাদিক সাহার জান্দ এবং মানবাধিকার কর্মী ড. রায়হান রশিদ।

সাহার জান্দ, যিনি গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, বলেন, “আমি ৪০টিরও বেশি দেশে সাংবাদিকতা করেছি। বাংলাদেশে যা দেখেছি, তা ইরান, ইরাক ও আফগানিস্তানের বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতির মতো ভয়ঙ্কর।” তিনি সংখ্যালঘুদের উপর হামলার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “একটি গ্রামে ১৭টি বাড়ি ও তিনটি মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এতটাই ভীত যে তারা ফিরে আসতে পারছে না।” তিনি আরও জানান, একজন মা তার ১৪ বছরের ছেলেকে হারিয়েছেন, যে হামলার ভয়ে দেশ ছাড়তে গিয়ে সীমান্তে মারা যায়।

বক্তৃতায় সাহার জান্দ নামে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। আমার সাম্প্রতিক সফরে আমি আরও ভয় পেয়েছি, কারণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বিষয়ে যথেষ্ট কভারেজ দিচ্ছে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মনে হচ্ছে বিশ্ব এই বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের এখনই বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে হবে, কারণ আমার মতে, এটি আফগানিস্তান, ইরাক বা ইরানের মতো অবস্থার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।” তিনি সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়টি তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

কেভিন লরেন্স ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, “আজ বাংলাদেশে সহিংসতা, নিপীড়ন ও আইনের শাসনের অবনতি দেখা যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।” ফজল-উর রহমান আফ্রিদি জানান, ধর্মীয় নিপীড়ন, আইনের অপব্যবহার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বিরোধীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উপেক্ষা করছে।

ড. রায়হান রশিদ বলেন, “৮ আগস্ট থেকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে মানবাধিকারের অবনতি ঘটেছে। সংখ্যালঘু, ট্রান্সজেন্ডার ও এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের উপর হামলা বেড়েছে। সাংবাদিক ও বিরোধীরা নীরবতার শিকার।” তিনি জঙ্গি মুক্তি ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতার সমালোচনা করে জাতিসংঘের তদন্তের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বক্তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষায় স্বাধীন তদন্ত, জাতিসংঘের প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানির আহ্বান জানান। পল ব্রিস্টো বলেন, “নারী শিক্ষায় অগ্রগতির প্রতীক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।”